রহস্যময় বাক্সঃ-
✅ দু'জনের দাম্পত্য জীবনের বয়েস ষাট বছর পার হলো। এতদিন এক সাথে/এক ঘরে/এক খাটে কাটানোর পর দুজনেই এখন বলতে গেলে এক দেহ/এক মন। একজনের কোনো ব্যাপারই আরেকজনের অগোচর নয়/আড়াল নয়। এ দীর্ঘ সময় অত্যন্ত সুখে কেটেছে দু'জনের। একে অপরের সেবা করে,একজন আরেক জনের সুবিধা/অসুবিধের প্রতি লক্ষ্য রেখেই ঘর/সংসার করেছে। দু'জনের মধ্যে আড়াল করার মতো,গোপন করার মতো,লুকোচুরি খেলার মতো কিছুই ছিল না। শুধু একটা বিষয়। স্ত্রী প্রথম দিন থেকেই একটা বাক্স অত্যন্ত যত্নের সাথে আলাদা করে রেখেছিল! ওটার ভেতরে কী আছে স্বামীকে দেখতে দেয়নি! প্রথম/প্রথম স্বামী কৌতূহল দেখিয়েছে! অভিমান করেছে। তবুও বউ টলেনি। বাক্সটা একান্ত নিজের করে আড়ালে রেখেছে! স্বামীও পরে মেনে নিয়েছেন। স্ত্রীর একান্ত বিষয় মনে করে ব্যাপারটা এড়িয়ে গেছেন। বয়েস হয়েছে। বুড়ির শরীরে নানা রোগ/বালাই বাসা বেঁধেছে। শত চিকিৎসাতেও কাজ হলো না। ডাক্তার শেষ কথা বলে দিয়েছেন! আর মাত্র ক'টা মাসই হয়তো বাঁচবেন! আর কোনো আশা নেই! বুড়ো উদ্ভ্রান্তের মতো হয়ে গেলেন! স্ত্রী হারানোর আগাম শোকেই অর্ধেক কাহিল হয়ে পড়লেন! তবুও মনে পাথর বেঁধে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন! আর স্ত্রীর পাশে ঠায় বসে/বসে সেবা করে গেলেন। বুড়ির অবস্থা দিনদিন অবনতির দিকে যাচ্ছে! কিছুতেই কিছু হচ্ছে না! বুড়ি একদিন রাতে হালকা খাবার খেতে খেতে বললেন,ওগো! আমার তো অন্তিম সময় ঘনিয়ে এসেছে। তোমাকে তো একটা বিষয় বলা বাকি রয়ে গেছে! কী সেটা? মনে নেই আমার একটা বাক্স ছিল! হ্যাঁ,হ্যাঁ। আলমারি খুলে সেটা নিয়ে এসে খুলে দেখো! ভেতরে তো দেখি ছোট দুইটা কাপড়ের পুতুল আছে! পাশেই সুই/সুতো! তুমি পুতুল দু'টো উঠিয়ে হাতে নিয়ে তারপর দেখো! ওমা! এখানে তো দেখি অনেক টাকাও আছে! না,অত বেশি কোথায়,পঁচিশ হাজার মাত্র! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না! পুতুল/সুই/সুতো/টাকা! হেঁয়ালী না করে খুলে বলো! দেখো,আমার যখন বিয়ে হয়েছিল,বিয়ের আগের রাতে দাদু আমাকে ডেকে নিয়ে বলেছিলেন,জানিস সুখময় দাম্পত্য জীবনের রহস্য কী? আমি কী করে জানবো? সেটাতো জানবে তোমরা বুড়িরা! তাহলে শোন,সফল দাম্পত্য জীবনের রহস্য একটাই কুরবানি দেওয়া। পশু কুরবানি দাদু? আরে না! ঝগড়া/বিবাদ কুরবানি করা! দাদু সে রাতে আরো বলেছিলেন শোন! যখনই তোর বরের ওপর রাগ আসবে,রাগটাকে যত কষ্টই হোক দমিয়ে রাখবি। প্রকাশ করবি না। পরে স্বামীর আড়ালে গিয়ে সুই/সুতা দিয়ে একটা পুতুল তৈরী করবি! বুড়ো স্বামীর চোখে এবার অশ্রুর তুফান শুরু হলো! ধরা গলায় বললেন শাফিয়া! তুমি সারাজীবনে মাত্র দু'বার আমার ওপর রাগ করেছো!? বুড়োর কান্না এলেও মনে খুবই আনন্দ বোধ করছিল! সারা জীবনে মাত্র দু'বার স্ত্রীকে কষ্ট দিয়েছে। ক'জন আছে তার মতো এমন ভালো স্বামী? আরেকটা খটকা রয়ে গেছে! আচ্ছা শাফিয়া পুতুলের ব্যাপারটা না হয় বুঝলাম,কিন্তু টাকার ব্যাপারটা!? এই পঁচিশ হাজার টাকার কথা বলতেছেন? এগুলো তো আমি পুতুল বিক্রি করে জমিয়েছি! (আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি)
No comments:
Post a Comment